তাবলীগ নিয়ে অজনপ্রিয় কয়েকটি কথা


তাবলীগ নিয়ে অজনপ্রিয় কয়েকটি কথা


বয়স তখন হাইস্কুলে পড়ি এমন। পাড়ার মসজিদে মাগরিবের নামাজের সালাম ফেরালাম। ঘাড়টা তখনো বাঁ দিকেই রয়ে গেল প্রায়। তখনি সামনের কাতারের এক লোক দাড়িয়ে"ইনশাআল্লাহ বাকি নামাজ বাদ ঈমান ও আমলের জরুরী বয়ান হবে। সব ভাই বসি। বহুত ফায়দা হবে।"আশৈশব বই, বক্তৃতা, সভা-সমিতি, সেমিনার, ওয়াজ প্রভৃতির প্রতি, তা যে মত ও পথের লোকই আয়োজন করুক না কেন, একটা টান আছে। সুতরাং, বসে পড়লাম। বেশির ভাগ নিয়মিত মুসল্লী চলে গেলে বোঝা গেল 'অচেনা' একদল লোক এসেছে এখানে গাট্টি-বোচকা নিয়ে। আল্লাহ, ফেরেশতা, পরকাল, নামাজ ও দ্বীনের পথে মেহনত ইত্যাদি নিয়ে নাতিদীর্ঘ বয়ান দিলেন বয়োবৃদ্ধ একজন। মোদ্দাকথায়, ওনাদের বহরে শামিল হয়ে বহুল প্রচারিত ফায়দা হাসিলের আহ্বান জানালেন। আনুমানিক ১ সপ্তাহ অবস্থান শেষে দলটি চলে গেলেন।

কলেজে-ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আবার রেগুলার দেখা পেলাম দলটির। এশার নামাজ শেষে ৫/৭ জনের ছাত্র-তাবলীগ প্রেয়ার রুমে গোল হয়ে বসে মোটাসোটা একটা বই, নাম ফাজায়েলে আমা'ল, পড়ে একজন, বাকিরা শুনে। বিস্তারিত পড়ার ধৈর্য্য নেই, তাই উল্টে-পাল্টে দেখলাম একদিন। নামাজ রোজা দাওয়াত সহ নানান দোয়া দরুদের ফজিলত, শিক্ষামূলক কাহিনী- এটাই বইটার আদ্যপান্ত। এর বাইরে সপ্তাহে একদিন তারা লাইন ধরে হলের কক্ষে কক্ষে যেতেন। আহ্বান একটাই, ওনাদের বহরে শামিল হয়ে বহুল প্রচারিত 'ফায়দা হাসিলে।'



তাবলীগকে অনিয়মিত দেখি আরেক স্থানে। মৎস্য ভবন থেকে শেরাটনের দিকে ফুটপাত ধরে হাটঁতে হাটঁতে। বছরজুড়ে কাকরাইল মসজিদ ও সংলগ্ন এলাকা গমগম। তাসবীহ, টুপি, আতর, ঢিলা কুলুখ, মেসওয়াক, ও খাবারের দ্রস্টব্য গন্ধ নাকে লাগবেই এখানে। দেশ ও বিদেশের নানান বয়সী, বিশেষত: বয়স্ক, মানুষের ভীড়। লক্ষ্য একটাই- ফায়দা হাসিল।

বছরে আরেকবার নিয়মিত তাবলীগের প্রচার-জোয়ার বয়ে যায় ইজতেমা নামক সম্মেলনের প্রাক্কালে। মোটামুটি ৫ দিনের জন্য যাবতীয় মতাদর্শের টিভি, রেডিও, পত্রিকা 'মুসলিম বিশ্বের ২য় বৃহত্তম' এ সমাবেশের বয়ানে বয়ানে মত্ত হয়ে উঠে। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড়াক্রান্ত রাস্তা, রেল, বাসের ছবি, হাত তুলে স্রস্টার দরবারে মোনাজাত, খালেদা-হাসিনা-এরশাদ ইত্যাদিদের সদলবলে আখেরীমোনাজাতে যোগদানের খবর। তারপর হারিয়ে যায়। নীরবে আমরা যারযার মত ঝাঁপিয়ে পড়ি আগেকার কাজে।

আপাত: এটাই তাবলীগ। সাধারনের কাছে। তবে আরেকটু গভীরে পেয়েছি অদ্ভুত কিছু বিষয়। ছাত্র-তাবলীগের মধ্যে অনেক বন্ধুকে পেয়েছি যারা ঘোরতর ছাত্রলীগ সমর্থক (!), প্রায় সবাই শিবিরের ঘোর-বিরোধি! তবে 'কলেজ-মেডিক্যাল-ভার্সিটিতে' ছদ্মবেশধারী তবলীগও আছে। শিবির, লীগ, দল, ফ্রন্টের টানাটানি থেকে বাচতে ফার্স্ট ইয়ারে কূশলী অনেকে 'তাবলীগের লেবাস' নিয়ে ফেলেন। তবে সেটাও কম কঠিন নয়। এ বয়সে দাড়ি, পান্জাবির ভাড় বহন করা কি চাট্টিখানি কথা! এ ধরনের বেশ কজনকে চিনি যারা স্নাতক শেষে দিব্যি দাড়ি ফেলে দিয়েছেন!! আহলে সুন্নাত, খারেজী, ওহাবী বা নানা ধরনের ধর্মীয় গ্রুপের অনেক মৌলভী মওলানাকে দেখেছি তবলীগের প্রতি সমালোচনা মুখর। কাউকে কাউকে এ ব্যাপারে নীরব, কেউবা পক্ষবাদী।

যেমনটা দ্বিধাগ্রস্ত আমিও। ইজতেমায় লক্ষ লক্ষ মানুষ যায়। কেন যায়? হয়ত আশা করে সওয়াব হবে। এভাবে আশা করে কোনো একস্থানে লক্ষ কোটি বা তারও বেশি লোক জড়ো হলেই কি সওয়াব হবে? কি কি কাজ করতে হবে, করলে ভাল হবে, কিকি কাজ করলে গোনাহ হবে তা কি মানুষের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে? না তো, বরং পরিপূর্নভাবে আল্লাহ রাসুলদের মাধ্যমে দিয়েই দিয়েছেন। সামর্থ্যবান মুসলিম/মানুষদের জন্য হজ্জ্ব নামক বিধানতো কারো কাছেই অজানা নয়। এটার অতিরন্জনে ২য়, ৩য়, ৪র্থ সম্মেলন করে, কাল্পনিক সওয়াব আশা করা কেমন কথা? কেউ কেউ বলতে পারেন- এখানে মানুষ প্রশিক্ষন লাভ করে। আসলে কি তাই? প্রশিক্ষন কি এত সোজা? আর প্রশিক্ষনের খোদা ও তার নবীরাসুলদের প্রদর্শিত টেকনিক কিংবা রেফারেন্স বই পুস্তক কি এসব? নাকি এটা নেহায়েতই লক্ষমানুষের আরেকটি গন্তব্যহীন সম্মেলন? সওয়াব ক্ষুধার্ত বোধহীন মুসলিমদের যুক্তিহীন বিক্ষিপ্ত করুনা প্রার্থনা? মুসলিম উম্মাহ নামক একটি 'আন্তর্জাতিক ভূতের' কল্যান কামনা, যার কল্যান জর্জ বুশও কামনা করতেন! সুযোগ পেলেই যে কেউ এর কল্যান কামনা করেন। আর ইজতেমা মাঠ থেকে বাসাই ফিরেই এর পাছায় বাঁশ দেন!!!

চোর, ডাকাত, ঘুষখোর, পেশাদার খুনী অনেকেই চুলে পাক ধরলে দিব্যি তাবলীগে যোগ দিয়ে ফেলেন। ঘুরতে থাকেন এ মসজিদ থেকে ও মসজিদ। যথারীতি বয়ান দিতে থাকেন আসরের নামাজের পর। কবর, হাশর নিয়ে বয়ান করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। অদ্ভুত এক ব্যাপার- অদ্যাবদী ১টাকা ঘুষ ফেরত এসেছে, রাস্ট্রীয় কোষাগার লুট করা ১টি পয়সাও ভুল বুঝতে পেরে ফেরৎ দিয়েছেন, কারো উপর অন্যায়ের জন্য মাফ চেয়েছেন তেমনটি দেখিওনি, শুনিওনি। কিন্তু আল্লাহর কাছে রাতদিন মাফ চাইছেন, ফাজায়েলে আমাল পড়ছেন, বয়ান করছেন!
আল্লাহ কে যে, তাদেরকে মাফ করবে? আল্লাহর কি কোন অধিকার আছে আরেকজনের মেরে দেয়া টাকা মাফ করার? এটা শুনতে খারাপ লাগতে পারে যে, এ ধরনের দাগী বার্ধ্ক্যপীড়িত সন্ত্রাসীদের একটা উত্তম আখড়া কিংবা আখেরাতেও লুটে পুটে খাওয়ার একটা ভালো রাস্তা (কাল্পনিক)হিসেবে তাবলীগকে পাওয়া যায় দেদার।

মসজিদে রাত্রিনিবাস ও ধ্যানের ব্যাপারে ইসলামে কিছু নেই তা না। বরং তাবলীগের জন্মের ঢের আগে রাসুল (স) রমজানের শেষ ১০ দিন পুরুষদের জন্য মসজিদ আর মহিলাদের গৃহঅভ্যন্তরে নিবীড় ধ্যানের উপদেশ দিয়েছেন। এর বাত্যয় ঘটিয়ে দল বেঁধে বছরব্যাপী মসজিদ ভ্রমন কিছুতেই কল্যানকর কিছু হতে পারেনা। এটা স্বরচিত সুন্নত (!) বা বড় জোড় 'ইসলামি বৈরাগ্যবাদের' চর্চা হতে পারে।


তাবলীগী নেসাব ফাযায়েলে আমাল বইয়ের এই কথাগুলোকে অনেকে শিরক বলেন।

“ক্ষুধার্থ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে খাদ্যের আবেদন করে ঘুমিয়ে পড়লেন। সেই অবস্থায় তার নিকট রুটি আসল, ঘুমন্ত অবস্থায় ঐ ব্যক্তি অর্ধেক রুটি খাওয়ার পর জাগ্রত হয়ে বাকী অর্ধেক রুটি খেলেন।” ফাযায়েলে হ্‌জ্জ, পৃ:১৫৫-১৫৬।

২) জনৈক মহিলা ত জন খাদেম কর্তৃক মার খাওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করলে, আওয়াজ আসল ধৈর্য ধর, ফল পাবে। এর পরেই অত্যাচারী খাদেমগণ মারা গেল। ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৫৯।

৩) অর্থাভাবে বিপন্ন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে হাজির হয়ে সাহায্যের প্রার্থনা করায় তা কবুল হল। লোকটি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখতে পেল যে, তার হাতে অনেকগুলো দিরহাম। ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৬২-৬৩।

৪) মদীনার মসজিদে আযান দেয়া অবস্থায় এক খাদেম মুয়াজ্জেমকে প্রহার করায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করল। প্রার্থনার তিনদিন পরই ঐ খাদেম মরা গেল। ফাযায়েলে হ্‌জ্জ, পৃ:১৬২-৬৩।

৫) জনৈক অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসায় ব্যর্থ হওয়ায় ঐ ব্যক্তির আত্মীয় (করডোভার এক মন্ত্রী) রোগ্যের আবেদন করে হুজুরের (সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবরে পাঠ কার জন্য অসুস্থ ব্যক্তিকে পত্রসহ মদীনায় প্রেরণ করে। কবরের পার্শ্বে পত্র পাঠ করার পরেই রোগীর আরোগ্য লাভ হয়ে যায়। ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৬৭।

৬) কোন ব্যক্তি হুজুরের রওজায় আরজ করায় রওজা হতে হুজুরের হস্ত মোবারক বের হয়ে আসলে উহা চুম্বন করে সে ধন্য হল। নব্বই হাজার লোক উহা দেখতে পেল। আবদুল কাদের জিলানীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ:১৫৯।

আল্লাহর দ্বীনে বিশ্ব ইজতেমা হল হ্জ্জ্ব। হজ্জ্ব ছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরূপ বিশ্ব ইজতেমা করেননি। "ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে একটি রাজ্যের নাম হরিয়ানা, এর সাবেক নাম পাঞ্জাব। দিল্লীর দক্ষিণে হরিয়ানার একটি এলাকার নাম মেওয়াত। এই মেওয়াতে ১৩০৩ হিজরীতে এক হানাফী বুজুর্গের জন্ম হয়। তার ঐতিহাসিক নাম ছিল আখতার ইলিয়াস। কিন্তু পরে তিনি শুধু ইলিয়াস নামে পরিচিত হন। ১৩২৬ হিজরীতে তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসার শাইখুল হাদীস মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাহেবের কাছে বুখারী ও তিরমিযী শ্রাবণ করেন। ১৩৪৪ হিজরীতে তিনি দ্বিতীয়বার হজ্জে যান। এই সময় মদীনায় থাকাকালীন অবস্থায় তিনি (গায়েবী) নির্দেশ পান, "আমি তোমার দ্বারা কাজ নিব"। ফলে ১৩৪৫ হিজরীতে তিনি দেশে ফিরে এসে মেওয়াতের একটি গ্রাম নওহে তাবলীগী কাজ শুরু করেন।

ইলিয়াস (রঃ) নবীজির রওজা শরীফ থেকে গায়েবী নির্দেশ পেয়েছিলেন বলে দাবী করেন। এটা ডাহা মিথ্যা কথা করাণ মহান আল্লাহ বলেনঃ
১। "আল্লাহ যেদিন রাসূলগণকে একত্রিত করবেন আর তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করবেনঃ তোমরা উত্তর পেয়েছিলে কি? তাঁরা বলবেন, আমরা তার কিছুই জানি না। আপনি অবশ্যই গায়েবের খবর ভাল জানেন।" (সূরা মায়েদা ৫ঃ৫৭)

২। "(নবী বলেন) আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমিই তাদের খোঁজ খবর নিয়েছি। তারপর যখন আমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নিলেন তখন আপনি (আল্লাহ) তাদের খোঁজ খবর রেখেছেন। আপনি সবকিছুর খবর রাখেন।" (সূরা মায়েদা ৫ঃ১১৭)

৩। "প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাধ গ্রহণ করবে। তারপর সবাই আমার নিকট ফিরে আসবে।" (সূরা আনকাবুত-২৯ঃ৫৭)

মৃত্যুর পরে কোন নাবী -রাসূল (সাঃ) গণই এ পৃথিবীর কোন খবর রাখতে পারেন না। মৃত্যুর পরে কারো আত্মা কবরে থাকে না, আল্লাহর নিকট ফিরে যায়। ফিরে যাওয়া অর্থ হল পূর্বে যেখানে ছিলাম সেখানে যাওয়া। জন্মের পূর্বে আমরা আল্লাহর নিকট ছিলাম। কোথায় ছিলাম, কেমন ছিলাম, কি করতাম, এসব যেমন আমরা কিছু্ই জানি না, তদরূপ মৃত্যুর পরে যেখানে যাব সেখানে থেকে পৃথিবীর কোন কিছুই জানা যাবে না।

অতএব রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর ইন্তিকালের পরও রেসালতের দায়িত্ব পালন করতে থাকবেন বলে বিশ্বাস করি, তাহলে "আজ তোমাদের দ্বীনকে আমি পরিপূর্ণ করে দিলাম" আল্লাহর এ ঘোষনাটাকে অবিশ্বাস করতে হয়। (নাউযুবিল্লাহ মিন জালিক)
তাবলীগী জাম'আতের কার্যকলাপ সোয়াবের আশায় আল্লাহর দ্বীনে নতুন সংযোজন। দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজন বিদ'আত। বিদ'আতীদের পরিণাম সম্পর্কে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতি বৎসর নিয়মিত ভাবে টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমা পালন করা হয়। টঙ্গিতে যে বিশ্ব ইজতেমা চালু করা হল তার প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী ইলিয়াস, আর আরাফাতে যে বিশ্ব ইজতেমা চালু আছে তার প্রতিষ্ঠাতা হলেন আল্লাহ তা'আলা। ইজতেমার শেষ দিনে "আখেরী মুনাজাত" চালু আছে, যদিও আল্লাহর শরীয়তে আখেরী মুনাজাত বলতে কোন কিছু নেই। এই আখেরী মুনাজাতের অংশ নেয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ, এমনকি অফিসের কর্ম-কর্তা, কর্মচারী অফিস ফাঁকি দিয়ে সরকারী গাড়ী ব্যবহার করে মাঠে উপস্থিত হন। এই মুনাজাতে শরীক হয়ে নিজেরা মুশরিক ও বিদ'আতী হলেন। টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমা আল্লাহ চালু করেননি এবং এতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সমর্থন নেই। এই ইজতেমায় অংশ গ্রহণ করলে আল্লাহর পরিবর্তে মাওলানা ইলিয়াসকেই মান্য করা হলো। আল্লাহকে ছাড়া আর কারো প্রবর্তিত প্রথা মানলেই সে মুশরিক। অফিসের কাজে ফাঁকি দেয়ায় রুজিটা আর হালাল থাকল না। হালাল রুজী না হলে কোন ইবাদতই আল্লাহ কবুল করেন না। লোকেরা বলতে থাকে, বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে দ্বিতীয় হজ্জ্ব, গরীবের হজ্জ্ব (নাউযুবিল্লাহ)! যদিও তবলিগী মুরব্বীগণ একথা স্বীকার করেন না। তবে মুরুব্বীদের জানা উচিৎ; এই বিদ'আতি অনুষ্ঠান চালু না করলে কিন্তু লোকদের এরূপ বলার কোন সুযোগই থাকত না।

এই আখেরী মুনাজাতে শারীক হবার জন্য নামাজী, বে-নামাজী, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী, বিদ'আতী, দুস্কৃতিকারী দলে দলে ময়দানের দিকে ধাবিত হন। কেউ বা ট্রেনের ছাদে আর কেউ বা বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে ঝুলে। তারা মনে করেন সকল প্রাপ্তির সেই ময়দান বুঝি টঙ্গির তুরাগ নদীর পাড়ে! মানুষ পায়খানা সাফ করেও সেখানে সাওয়াব কামানোর আশায় থাকেন। এ যেন সওয়াবের ছড়া ছড়ি, যে যতো কুড়ায়ে থলে ভরতে পারবে তার ততোই লাভ। ট্রেনের ছাসের উপর মানুষের ঢল দেখে টিভিতে সাংবাদিক ভাইবোন গণ মাথা কাপড় দিয়ে বার বার বলবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আজ তাদের পাপের প্রাশ্চিত্ত করতে ছুটে চলেছেন তুরাগের পাড়ে। পরের দিনে বড় হেডিং দেখে যারা এবার যান নাই তারা মনে মনে ওয়াদা করে বসবেন যে আগামীতে যেতেই হবে। তা না হলে পাপীদের তালিকায় নাম থেকেই যাবে। এভাবে পঙ্গোপালের মতো এদের বাহীনি বাড়তে থাকবে। এদের আর রুখা যাবে না। কেননা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণও সেখানে গিয়ে আচঁল পেতে প্রার্থনা করেন। টিভিতে সরাসরি মুনাজাত সম্প্রসারণ করা হয়। রেডিও শুনে রাস্তার ট্রাফিকগণও হাত তুলে আমীন আমীন বলতে থাকে। এই দেখে রাস্তার রিক্সাওয়ালা এবং তার যাত্রীগণও বসে থাকতে পারেন না। হায়রে তামাশা!! কি সর্বনাশা বিদ'আত কুরে কুরে আমাদের গ্রাস করছে তা আমরা জানিও না!!

তাবলীগী জামা'আত দেইখ্যা উষ্ঠা খাইয়া পইড়েন না। নীচের হাদীসটি মিলিয়ে দেখবেন আশা করি।

সাহাবী আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর শেষ যামানায় আমার উম্মতের মধ্য হতে পূর্বের কোন দেশ থেকে একটি জামাআত তাবলীগ নামে বের হবে, তারা কুরআন পাঠ করবে, তাদের কুরআন পাঠ তোমাদের কুরআন পাঠের তুলনায় খুবই সুন্দর হবে। কুরআনের প্রতি বাহ্যত তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা দেখে মনে হবে যেন ওরা কুরআনের জন্য কুরআন ওদের জন্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওরা কুরআনের প্রতিটি আয়াতের উপরে ঈমান রাখবে না এবং কুরআনের কঠিন নির্দেশের উপর আমল করবে না।

এই জামা'আতের অধিকাংশ লোক হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। যেমন কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানে হবে মূর্খ তেমন সাধারণ জ্ঞানেও হবে মূর্খ। এই জামাআতে যদি কোন শিক্ষিত লোক যোগদান করে তাহলে তার আচরণ ও স্বভাব হয়ে যাবে জামাআতে যোগদানকারী অন্যান্য মূর্খের মত। মূর্খরা যেমন মূর্খতার আনুগত্য করবে তেমনি শিক্ষিত লোকটিও মূর্খদেরই আনুগত্য করবে। এই জামা'আতের বয়ান ও বক্তৃতায় থাকবে কেবল ফযিলাতের বয়ান। বিভিন্ন আমলে সর্বোচ্চ ফযিলাতের প্রমাণহীন বর্ণনাই হবে তাদের বয়ানের বিষয়বস্তু।

হে মুসলমানগণ ! ঐ জামা'আতের লোকদের নামায, রোযা অন্যান্য আমল এতই সুন্দর হবে যে, তোমরা তোমাদের নামায, রোযা ও আমল সমূহকে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে। এই জামা'আতের লোকেরা সাধারণ মানুষকে কুরআনের পথে তথা দ্বীনের পথে চলার নামে ডাকবে, কিন্তু তারা চলবে তাদের তৈরী করা পথে, ডাকলেও তারা কুরআনের পথে চলবে না।

তাদের ওয়াজ ও বয়ান হবে মধুর মত মিষ্টি, ব্যবহার হবে চিনির মত সুস্বাদু, তাদের ভাষা হবে সকল মিষ্টির চাইতে মিষ্টি। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ ধারণ-ধরণ হবে খুবই আকর্ষণীয়, যেমন সুন্দর হরিণ তার হরিণির পিছনে যেমন ছুটতে থাকে তেমন সাধারণ মানুষ তাদের মিষ্ট ব্যবহার, আমলের প্রদর্শনী ও সুমধুর ওয়াজ শুনে তাদের জামা'আতের দিকে ছুটতে থাকবে।

তাদের অন্তর হবে ব্যাঘ্রের মত হিংস্র। বাঘের অন্তরে যেমন কোন পশুর চিৎকার মমতা প্রকাশ করে না, তেমন কুরআন ও হাদীসের বাণী যতই মধুর হোক তাদের অন্তরে প্রবেশ করবে না। তাদের কথাবার্তা আমল আচরণ, বয়ান যেগুলি তারা তাদের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তার-ভিতরকার কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আমলগুলি বর্জন করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার জন্য যতবার কেউ কুরআন ও সুন্নাহ প্রদর্শন করুক বাঘের অন্তরে যেমন মমতা প্রবেশ করে না তেমন তাদের অন্তরে কুরআন ও সুন্নার প্রবেশ করবে না।

তাদের জামা'আতে প্রবেশ করার পর তাদের মিষ্টি ব্যবহারে মানুষ হবে মুগ্ধ, কিন্তু ঐ মনোমুগ্ধ ব্যবহারের পেছনে জীবন ধ্বংসকারী, ঈমান বিনষ্টকারী, ইসলামী মুল্যবোধ বিনষ্টকারী মারাত্মক বিষ বিরাজমান থাকবে। তাদের প্রশিক্ষন ধীরে ধীরে মানুষের অন্তর হতে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এ আনুগত্যের প্রেরণা শেষ করে দেবে এবং জামা'আতের আমীরদের আনুগত্যের প্রতি মরণপণ আকৃষ্ট করবে। আমীরগণ দেখতে হবে খাঁটি পরহেজগার দ্বীনদার ব্যক্তিদের মত, কিন্তু তার অন্তর হবে শয়তানের মত, কুরআন সুন্নাহের প্রতি বিদ্রোহী। আমীরগণ যা করে যাচ্ছে তার মধ্যে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কাজ কখনো কেউ ধরিয়ে দিলে কোনক্রমেই তা পরিবর্তন করতে প্রস্তুত হবে না। অর্থাৎ কুরআন হাদীস উপস্থাপন করার পর তারা কুরআন হাদীস দেখেও কুরআন হাদীস বর্জন করে মুরব্বীদের কথা মানবে। কুরআন হাদীসের প্রতি তাদের অনীহা এতই তীব্র হবে যে, তারা অর্থসহ কুরআন হাদীস কখনই পড়বে না, পড়ানোও যাবে না।

এই জামা'আতটি ইসলামের তাবলীগ করার কথা যতই বলুক কুরআন যত সুন্দরই পাঠ করুক, নামা রোযা যতই সুন্দর হোক, আমল যতই চমৎকার হোক, মূলতঃ ঐ জামা'আতটি ইলসালম হতে বহির্ভূত হবে।

সাহাবাগণ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ঐ দলটি চিনবার সহজ উপায় কি হবে? আমাদিগকে জানিয়ে দিন।

রাসূল (সাঃ) বললেন, এই ইসলাম বহির্ভূত জামা'আতটি চিনবার সহজ উপায় হল-
১) তারা যখন তালীমে বসবে, গোল হয়ে বসবে।
২) অল্প সময়ের মধ্যে এই জামা'আতের লোকসংখ্যা খুব বেশী হবে।
৩) এই জামা'আতের আমীর ও মুরব্বীদের মাথা নেড়া হবে। তারা মাথা কামিয়ে ফেলবে।

তীর মারলে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। ঐ তীর আর কখনও ধনুকের দিকে ফিরে আসে না, তেমন যারা এই জামা'আতে যোগদান করবে তারা কখনও আর দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে না। অর্থাৎ এই জামা'আতকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কুরআন হাদীস যত দেখানো হোক, যত চেষ্টাই করা হোক না কেন দলটি দ্বীনের পথে ফিরে আসবে না। এদের সাথে তোমাদের যেখানেই স্বাক্ষাত হোক, সংগ্রাম হবে তোমাদের অনিবার্য। এই সংগ্রাম যদি কখনও যুদ্ধে পরিণত হয় তাহলে তা থেকেও পিছ পা হবে না।

এই সংগ্রামে বা যুদ্ধে যারা মৃত্যুবরণ করবে, তাদেরকে যে পুরষ্কার আল্লাহ দান করবেন তা অন্য কোন নেক কাজে দান করবেন না।

(বুখারী, আরবী দিল্লীঃ ২য় খন্ড, পৃঃ ১০২৪, ১১২৮, মুয়াত্তা ইমামা মালেক, আরবী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৮, আবূ দাউদ, আরবী দিল্লী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৬৫৬, তিরমিযী, মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৫৫, মুসলিম,মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৬২)

হাদীস সমূহের বর্ণনাকারী হলেন আবূ সাঈদ খুদরী, আলী, আবূ হুরায়রা, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)। (দেখুন সহীহ আল বুখারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৬৪৪৯, ৬৪৫০, ৬৪৫২, ৭০৪১ (আ.প্র.), বাংলা অনুবাদ মুয়াত্তা মালেকঃ ই.ফা. ১ম খন্ড, হাঃ নং- ৫৭৮)

বিশ্ব বরেণ্য আলিমগণের দৃষ্টিতে তাবলীগ জামা'আত ও তার নিসাব :

সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ! আমি আপনাদের খেদমতে সামান্য একটু আলোচনা করব বিশ্বের সকল মুসলিমদের নিকট সমাদৃত আলিম উলামাদের মতামত, বিশেষ করে আরব বিশ্বের আলিমগণের অভিমত। কারন আমি কয়েকেটি বই পড়ে জানতে পারলাম যে, এতদিন ধরে আমরা যে সাওয়াবের আশায় তবলীগী কাজ করছি এবং পিপিলিকার স্রোতের মতো তুরাগনদীর পাড়ে জমায়েত হয়ে ফজিলতের বয়ান শুনে কান ঝালাপালা করে সমস্ত পাপ মুক্ত হয়ে যার যার ঘরে ফিরছি তা সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং বিদ'আতী কার্যকলাপ। দ্বীনের মধ্যে সওয়াবের আশায় নতুন কোন পন্থা আবিষ্কার করাই হল বিদা'আত। আরব বিশ্বের উলামায়ে কিরাম তাবলীগী জামা'আত ও তার নিসাবকে বাতিল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারই প্রমান স্বরূপ বর্তমান শাতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কিছু আলিমের মতামত সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

আল্লাহ পাক শারী'আতের বিভিন্ন বিষয়ে এ সমস্ত আলিমদের অভিমত গ্রহণ করার জন্য আল কোরআনে বলেন, "তোমরা জ্ঞানবানদের জিজ্ঞেসা কর, যদি তোমরা তা না জান।" (সূরা আম্বিয়া, ৭)

০১। শাইখ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আল শাইখ (রহঃ)- সাবেক গ্রান্ড মুফতী, সৌদী আরব তাঁর রাজকীয় তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রধানকে লেখা পত্রে তাবলীগ জামা'আত সম্পর্কে বলেন,

আমি মহোদয়ের নিকট এ প্রতিবেদন পেশ করছি যে, এই জামা'আতের কোনই ফায়দা নেই, এটি একটি বিদ'আতী এবং গোমরা সংগঠন। তাদের নিসাব গ্রন্থ পড়ে দেখলাম, তাতে গোমরাহী এবং বিদ'আত ভরপুর। এতে কবর পূঁজা এবং শিরকের দিকে আহ্বান করা হয়েছে। বিষয়টি এমনই যে, এ ব্যাপারে চুপ থাকা যায় না। এজন্য অবশ্যই আল্লাহ চাহেন তো আমি এর প্রতিবাদ লিপি পাঠাব যেন এর বিভ্রান্তি ও বাতিল প্রকাশ হয়ে পড়ে। আল্লাহর নিকট দু'আ করি তিনি যেন, তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করেন এবং কালিমাকে সুউচ্চে রাখেন- আমীন! তারিখঃ ২৯/০১/১৩৮২ হিঃ (তথ্য সূত্রঃ ফতওয়া ও চিঠিপত্র, শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে শাইখ, খন্ড ১ পৃঃ ২৬৭-২৬৮)

০২। শাইখ আবদুল আযীয বিন বায (রহঃ)'র নিকট তাবলীগ জামা'আত এর সঙ্গে চিল্লায় বের হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, "আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। অতঃপর তাবলীগ জামা'আতের নিকট আক্বীদাহর ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ধারণা নেই। সুতরাং তাদের সাথে বের হওয়া উচিত নয়। একমাত্র যার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'তের আক্বীদা সম্পর্কে জ্ঞান ও স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে সে বের হতে পারে, এজন্য যে তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিতে এবং প্রয়োজনীয় নাসীহাত করতে পারে এবং তাদেরকে কল্যাণমূলক কাজে সহায়তা করতে পারে। কেননা, তারা তাদের কাজের ব্যাপারে খুবই তৎপর। কিন্তু তারা আরো অধিক জ্ঞানের মুখাপেক্ষী এবং আলিম-উলাময়ে কিরামের প্রতি মুখাপেক্ষী, যারা তাদেরকে তাওহীদ ও সুন্নাহর জ্ঞানে আলোকিত করবে। আল্লাহ তা'আলা সকলতে দ্বীনের জ্ঞান দান করুন এবং এর উপর সাবেত রাখুন। আমীন!

০৩। শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাবলীগ জামা'আত ও এর সাথে সংশ্রব রাখার ব্যাপারে এবং তাদের নির্দিষ্ট তরীকার যিকর ও ছয় উসূল সম্পর্কে। উত্তরে বলেন, "ইবাদাত হল 'তাওকিফী' অর্থাৎ শারীয়াত নির্ধারিত। এজন্য কোন মুসলিমই কোন ইবাদাত করতে পারবে না যা আল্লাহ ও তাঁরা রসূল (সাঃ) নির্দিষ্ট করেননি। কেননা আল্লাহ তা'আলা অস্বীকার করেছেন তাদেরকে যারা আল্লাহ তাঁর রসূল (সাঃ) ব্যতীত অন্য কারো তৈরী করা ইবাদাত করবে।

আল্লাহ পাক বলেন, "তাদের কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য রয়েছে, তাদের জন্য যারা বিধান তৈরী করছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? যদি চূড়ান্ত ফায়সালা না থাকত তবে তাদের মাঝে এখই দফারফা করে দেয়া হত।" (সূরা আশ-শুরা ২১)

ইবাদত হল তাওকিফী' তার ধরণ, পরিমাণ, গুণাবলী, সময় এবং স্থানের দিক দিয়ে। সুতরাং ইবাদত অবশ্যই শারী'আত মোতাবেক হতে হবে। প্রশ্নকারীরা যা উল্লেখ করেছে, এভাবে ক্রমাধারায় বিদ'আতী তরীকায় আল্লাহর যিকর ও তাদের ছয় উসূল দেখতে হবে যে, শারীয়াতের এভাবে সাব্যস্ত রয়েছে কি না? যদি রাসূল (সাঃ) থেকে এভাবে সাব্যস্ত হয়ে থাকে তাহলে মাথা পেতে নিতে হবে। আর যদি সাব্যস্ত না থাকে তাহলে যা রসূল (সাঃ) থেকে সাব্যস্ত রয়েছে তাই যথেষ্ট। আমি জানি না যে, রসূল (সাঃ) থেকে এভাবে যিকর তিলাওয়াত ও উসূল সাব্যস্ত রয়েছে কিনা। এজন্য আমার ভাইদের অনুরোধ করছি যারা এর সাথে জড়িত তারা যেন তা পরিত্যাগ করেন এবং রাসূল (সাঃ) থেকে প্রমাণিত ও সাব্যস্ত সে অনুযায়ী আমল করেন। সেটাই তাদের জন্য উত্তম এবং প্রতিফলও ভাল হবে।

০৪। শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)'র নিকট প্রশ্ন করা হয়ঃ

তাবলীগ জামা'আত সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? এদের সাথে কোন তালিমে 'ইলম বা অন্য কেউ আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে বের হতে পারে কি?

উত্তরে তিনি বলেন, তাবলীগ জামা'আত আল্লাহর কুরআন এবং রসূলের হাদীসের তরীকার উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এবং আমাদের সলফে সালিহীনদের পন্থার উপর নয়। অবস্থা যখন এই, তখন তাদের সাথে বের হওয়া জায়িয হবে না। কেননা এটা আমাদের সালফে সালিহীনদের তাবলীগের পন্থার পরিপন্থী। দা'ওয়াতের কাজে বের হবেন আলিম বা বিদ্বান ব্যক্তি। আর এরা যারা বের হচ্ছে তাদের উপর অবশ্য করণীয় হল নিজের দেশে জ্ঞান শিক্ষা করা, মাসজিদে মাসজিদে জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করা, যারা দা'ওয়াতের কাজ করবে তারা যেন আলিম তৈরী হয়। এ অবস্থায় তালিবে ইলমদের উচিত যেন এদেরকে তাদের দেশেই কুরআন-হাদীস শিক্ষার জন্য আহ্বান জানায়। মানুষকে আল্লাহর পথে দা'ওয়াত তাবলীগীরা কুরআন ও সুন্নাহকে তাদের মূলনীতি হিসাবে গণ্য করে না। বরং তারা এই দা'ওয়াতকে বিভক্ত করে ফেলেছে। এরা যদিও মুখে বলে যে, তাদের দা'ওয়াত কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক তা নিছক মুখের কথা, এদের কোন একক আক্বীদা বিশ্বাস নেই যা তাদেরকে একত্রিত করতে পারে। এজন্যই দেখা যায়- এরা হল সূফী ও মাতুরিদী, আশায়িরীর আর এরা তো কোন মাযহাবেই নেই। আর এর করণ হল তাদের আক্বীদাহ-বিশ্বাস জটপাকানো। এদের নিকট স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাব। এদের জামা'আত প্রতিষ্ঠার প্রায় অর্ধশত বছর পার হয়ে গেল কিন্তু এত লম্বা সময়ের পরও তাদের মাঝে কোন আলিম তৈরী হলো না। আমরা এজন্যই বলি আগে জ্ঞানার্জন কর, তারপর একত্রিত হও, যেন একত্রিত হওয়া যায় নির্দিষ্ট ভিত্তির উপর, যাতে কোন মতভেদ থাকবে না।

তাবলী জামা'আত বর্তমান সূফী মতবাদের ধারক বাহক জামা'আত। এরা চরিত্র সংশোধনের ডাক দেয় কিন্তু আক্বীদা-বিশ্বাসের সংস্কার ও সংশোধনের ডাক দেয় না। এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নিশ্চূপ। কেননা তাদের ধারণা মতে এর দ্বারা বিভক্তি সৃষ্টি হবে। জনাব সা'দ আল হুসাইন এবং ভারত-পাকিস্তানের তাবলীগের মুরব্বীদের সাথে বেশ কিছু পত্র যোগাযোগ হয়। এর দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা ওয়াসীলা, উদ্ধারকারী (ইস্তিগাসা) এবং এ ধরনের অনেক ধারণাই সমর্থন করে। প্রত্যেক তাবলীগীকে এই চার তরীকার ভিত্তিতে বাই'আত গ্রহণ করতে হবে। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে এদের প্রচেষ্টায় অনেক মানুষই আল্লাহর পথে ফিরে এসেছে। বরং এদের সাথে বের হবার জন্য কিউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার জন্য কি এটা যথেষ্ট নয়? এ ব্যাপারে বলছি যে, এটার আমরা অনেক শুনেছি এবং জানি, সূফীদের কাছে থেকে অনেক ঘটনাই জানি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি শাইখের আক্বীদাহ ফাসিদ হয়, হাদীস জানে না বরং লোকজনের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে এতদ্বসত্ত্বেও অনেক ফাসিক লোক তার হাতে তাওবাহ করে। যে দলই ভাল বা কল্যাণের দিকে ডাকবে অবশ্যই তার অনুসারী পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা দৃষ্টি দিবো যে, সে কিসের দিকে আহ্বান করছে? সে কি কুরআন হাদীস এবং সালফে সালিহীনের আক্বীদার দিকে ডাকছে এবং কোন মাযহাবের ব্যাপারে কোন রকম গোঁড়ামী করে না এবং যেখানেই পায় সুন্নাতের অনুসরণ করে। তাবলীগ জামা'আতের কোন ইলমী তরীকা বা পন্থা নেই। তাদের পন্থা হল স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে তার জন্ম হয়েছে। এরা সব রঙেই রঙ্গীন হয়। (ইমারতী ফতওয়া, আলবানী, পৃঃ ৩৮)

আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার ধোকাবাজী হতে রক্ষা করূন। আমীন!


তাবলীগ যেভাবে মুসলমানদের ধ্বংস করছে- তারাকী হাসান


শুরুতে বলে রাখি আমি নিজেও একসময় তাবলীগের সাথে জড়িত ছিলাম। তাবলীগের সাথে শত্রুতা করে এই লেখা না। বরং ইসলামের সাথে সাংঘর্শিক বিষয়গুলো তুলে ধরা সব মুসলমানের দায়িত্ব। তারা যদি তাদের ভিন্ন আকিদা, শিক্ষা ও ভ্রান্ত আমলের বইগুলো অনুসরন করা বাদ দিয়ে কোরআন ও হাদিস অনুসরন করে সে অনুযায়ী আমল ও মানুষকে দাওয়াত দিত, তাহলে মুসলমানদের অনেক বেশি উপকার হত!

► সংক্ষেপে “তাবলীগ জামায়াত” এর ইতিহাস ও দলের নাম বিশ্লেষণঃ

কোরআনের এই বাণী “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” কে মুল টার্গেট করে ১৯২৬ সালে মওলানা ইলিয়াস আল কান্ধলভি তাবলীগ জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন। (পরে আমরা দেখব এরা কি সত্যি অসৎ কাজের নিষেধ করে কিনা...)। পরবর্তীতে গিয়ে মওলানা জাকারিয়ার সময় থেকে এদের কাজ আরও সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়। উল্লেখ যে, মওলানা জাকারিয়া একজন সুফি মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।

তাবলীগ অর্থ প্রচার করা, আর জামায়াত অর্থ দল। তাবলীগ জামায়াত অর্থ প্রচারের দল। তারা কি প্রচার করে? যদি ইসলাম প্রচার করে, তাহলে তাদের নাম হওয়া লাগতো “ইসলামে তাবলীগ জামায়াত” বা “দাওয়াতে ইসলামী”। বিধর্মীরা ইসলাম নামটা সহ্য করতে পারেনা বলে আর চিল্লা লাগিয়ে বিধর্মীদের দেশে যাতায়াতের সুবিধার্থেই হয়তো তারা কৌশলগত দিক চিন্তা করে ইসলামের নাম তাদের দলের সাথে যোগ করেনি।

► তাবলীগদের সিলেবাসঃ

একই মতবাদ ও বিশ্বাসের সকল মানুষ নিয়ে একটা দল তৈরি হয়। তাবলীগও একটা দল। তাদের মতবাদে বিশ্বাসী মানুষ তৈরি করতে তাদের একটা নির্দিষ্ট সিলেবাস আছে যা সকল তাবলীগদের পাঠ্যবই। কিন্তু এগুলোতে কিছু কোরআন ও হাদিস শিক্ষা থাকলেও এসব বইয়ে অনেক কথা আছে যা কোরআন ও রাসুলের হাদিসের সংঘর্ষশীল ও অপব্যখায় ভরপুর যার প্রমান আমি পরে দিব।

তাবলীগদের নিসাব বা সিলেবাস অনুযায়ী আম বই দুইটি।
১. ফাযায়েল আমল যার খণ্ড আটটি- ফাযায়েল নামাজ, তাবলীগ, জিকির, কোরআন, রমজান, দরুদ, হজ ও হেকায়তে সাহাবা।
২. ফাযায়েল সাদাকাত- ২টি খণ্ড।

তাদের খাস বইও দুইটি-
১. হায়াতুস সাহাবা।
২. রিয়াদুস সালেহিন (শুধু আরবদের জন্য) ।

তাদের সিলেবাসে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ

১. এখানে কোন কোরআন ও এর কোন তাফসীরগ্রন্থ নেই। তাবলীগরা কখনো কোরআনের অনুবাদ ও এর তাফসীর অধ্যয়ন করে না। তাবলীগের মুরুব্বিরা কোরআনকে শুধু আরবিতে পড়ে অনেক ফায়দা হাসিলের দাওয়াত দিলেও তারা সাধারন মানুষকে অর্থ ও তাফসীরসহ কুরআন বুঝার ব্যপারে নিরুৎসাহিত করে। তারা বলে মুফতি, আলেম না হলে বা ১৫টি ভাষায় জ্ঞান না থাকলে কুরআন বুঝা উচিত না। অথচ আল্লাহ বলেছেন,

--> “আমি বুঝার জন্য কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি। কেউ কি বুঝতে চায়"? (সূরা কামার)

--> “তারা কোরআন নিয়ে কেন গবেষণা করেনা? তাদের অন্তরে কি তালা লেগে গেছে?”(সূরা মুহাম্মদঃ৪)

২. তারা নবীর সুন্নাতকে ধারন করে এই দাবী করে। কিন্তু কোরআনের পরে ইসলামের মুলভিত্তি সহিহ হাদিসগ্রন্থ বুখারি, মুসলিম ইত্যাদি তাদের সিলেবাসে নেই এবং এগুলো পড়তেও তারা উৎসাহ দেয়না। আর ফাযায়েল সিরিজের বইগুলো মওলানা ইলিয়াস ও হায়াতুস সাহাবা বইটা ইলিয়াসপুত্র ইউসুফ কান্ধলভি দ্বারা রচিত। পিতা-পুত্রের একই ভাব ও নির্দিষ্ট মতাদর্শে লিখিত বইগুলোই শুধু তাদের জ্ঞানের মুল উৎস।

৩. তাদের সিলেবাসে লক্ষ্য করে দেখবেন যে জিহাদ সম্পর্কে কোন বই নেই। তারা সুকৌশলে মানুষকে জিহাদ থেকে দূরে রেখে পরকাল ও দোআ-জিকির নির্ভর ইসলাম প্রচার করতে ব্যস্ত। জিহাদের ব্যখায় তারা যুদ্ধ বা আন্দোলন না করে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা বুঝায়। কিন্তু রাসুল (সঃ) এর জীবনী থেকে দেখা যায় তিনি আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াতও দিয়ছেন, সাথে যুদ্ধ, আন্দোলন, সংগ্রামও করেছেন। সাহাবীরা কি শুধু জিকির, আমল করেই তাদের জীবন পার করে দিয়েছেন, না ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন করে তাদের জীবন দান করেছেন? তাদের মত হল, নামাজ, রোজা, জিকির করব, জিহাদ করব না। এমন লোকদের ব্যপারে আল্লাহ বলছেন,

“তোমরা কি তাদেরকেও দেখেছো, যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখো এবং নামায কায়েম করো ও যাকাত দাও? এখন তাদেরকে যুদ্ধের হুকুম দেয়ায় তাদের একটি দলের অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা মানুষকে এমন ভয় করেছে যেমন আল্লাহকে ভয় করা উচিত অথবা তার চেয়েও বেশী। তারা বলছেঃ হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এই যুদ্ধের হুকুমনামা কেন লিখে দিলে? আমাদের আরো কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন"? (সূরা নিসাঃ ৭৭)

৪. আরবরা যেহেতু দুর্বল ও জাল হাদিস ও বিভিন্ন কেচ্ছা-কাহিনী (যা ফাযায়েল আমল বইতে আছে) বিশ্বাস করেনা, তাই আরবদেশ গুলোতে এর পরিবর্তে ইমাম নবভি রচিত “রিয়াদুস সালেহিন” পড়ানো হয়। উল্লেখ যে, পৃথিবীর অনেক ভাষায় “ফাযায়েল আমল” বইটি অনুবাদ হলেও আরবি ভাষায় এটার অনুবাদ করা হয়নি।

► মওলানা জাকারিয়া ফাজায়েল আমল বইটি কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লিখেছিলেন?

এর উত্তর মওলানা জাকারিয়ার নিজের মুখ থেকেই শুনুন। তিনি তার “ফাজায়েল আমল” বইয়ের ভুমিকায় শুরুতেই লিখেছেন,
“আল্লাহ তায়ালার তারীফ ও প্রশংসা এবং নবীয়ে করীম (ছঃ) এর উপর দরুদ শরীফ পড়ার পর, ওলামায়ে কেরাম ও ছুফীকুল শিরোমণি, মোজাদ্দেদ দ্বীন, হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) আমাকে আদেশ করেন যে তাবলীগে দ্বীনের প্রয়োজন অনুসারে কোরআন ও হাদিছ অবলম্বনে যেন একটা সংক্ষিপ্ত বই লিখি। এতবড় বুজুর্গের সন্তুষ্টি বিধান আমার পরকালে নাজাতের উছিলা হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই। 

এখানে লক্ষনীয়ঃ
১. তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বইটি লিখেন নি। তিনি লিখছেন তার উস্তাদ মাওলানা ইলিয়াস এর সন্তুষ্টি লাভের জন্য।

২. যতটা বিশেষণ তিনি আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর পরিচয়ে দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি বিশেষণ দিয়ে তার উস্তাদ মাওলানা ইলিয়াস এর পরিচয়ে দিয়েছেন।

৩. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করেই পরকালে নাজাত পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি তার উস্তাদের সন্তুষ্টিকে নাজাতের উসিলা বলেছেন। এটা একটি শিরক যা ইহুদি-নাসারারা করে। আল্লাহ বলেন,
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের আলেম, আবেদদের (পীর, দরবেশ, ধর্মযাজক) কে তাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মরিয়ম পুত্র মসিহ্‌কেও। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে তারা শুধুমাত্র এক মা’বূদের ইবাদত করবে যিনি ছাড়া আর আর কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি তাদের অংশী স্থির করা হতে কতইনা পবিত্র!” (সূরা আত্‌ তাওবাঃ ৩১)

 জাল হাদিস কিভাবে উৎপত্তি হয় তার বাস্তব প্রমানঃ

তাবলীগী ভাইদের অনুসরনিয় ও পঠিত বই “ফাজায়েল আমল” এর জিকির অধ্যায়ে ৩৫৪ পৃষ্ঠায় নীচের ঘটনাটি উল্লেখ আছে যা আমি সংক্ষেপে উল্লেখ করলামঃ

শায়খ আবু করতবী (রঃ) বলেন, আমি শুনিয়াছি যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার কালেমা পড়িবে সে দোযখ হইতে নাজাত পাইবে। ইহা শুনিয়া আমি নিজের ও আমার স্ত্রীর জন্য সত্তর হাজারবার এবং অতিরিক্ত কয়েকনিছাব আদায় করিয়া পরকালের ধন সংগ্রহ করি। আমাদের নিকট এক যুবক থাকিত এবং সে নাকি কাশফের মাধ্যমে বেহেশত ও দোযখ দেখিতে পাইত, আমি উহাতে সন্দেহ করিতাম। একদিন ঐ যুবক আমার সহিত আহার করিতে বসে চিৎকার করে বলিয়া উঠিল, আমার মা দোযখে জ্বলিতেছে, আমি তাহার অবস্থা দেখিতে পাইতেছি। একথা শুনিয়া আমি মনে মনে আমার পড়া কালেমার অতিরিক্ত নিছাব হতে এক নিছাব (৭০ হাজার) ঐ যুবকের মায়ের নামে বখশিয়া দিলাম, যা আমি ও আল্লাহ ছাড়া আর কেহ জানত না। কিছুখন পর ঐ যুবক বলিয়া উঠিল, চাচা আমার মা দোযখ থেকে নাজাত পাইয়া গেলেন।

উক্ত গল্প থেকে একটি নতুন জাল হাদিস তৈরি হয় যা হল-
“সত্তর হাজার বার কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করে এর সওয়াব মৃত্যু ব্যক্তির নামে উৎসর্গ করলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে”।

নাউজুবিল্লাহ !!! রাসুলের নামে কি জঘন্য মিথ্যাচার। অথচ রাসুল (সঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাপুর্বক আমার নামে মিথ্যা আরোপ করবে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা খুজে নেয়”। (সহিহ বুখারি)

এই গল্প থেকে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ 

১. জান্নাত ও জাহান্নাম ও মৃত্যুব্যক্তির কি হচ্ছে তা আল্লাহ গায়েব বা অদৃশ্য রেখেছেন। ফাজায়েল আমল কিতাবে যা উল্লেখ আছে তা প্রমাণ করে ঐ যুবক গায়েবের খবর জানত। অথচ গায়েবের খবর একমাত্র আল্লাহ জানেন। আল্লাহ বলেন,
“বলুন, আল্লাহ ব্যতিত নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানেনা। এবং তারা জানেনা যে, তারা কখন পুনারাজ্জিবিত হবে”। (সুরা নামলঃ ৬৫)

২. শায়খ আবু করতবী (রঃ) ব্যক্তিটা কে? তিনি বলেন, আমি শুনিয়াছি যে...। তিনি কই থেকে শুনেছেন? কোন হাদিছে এমন কথা নেই।

৩. জনৈক আবু করতবী (রঃ) এটাকে কাশফ বলেছেন। অদৃশ্য জগতের কিছু কথা প্রকাশ হওয়াকে কাশফ বলে। কাশফ সত্য - মিথ্যা দুটোই হতে পারে। তাই শরীয়তের ক্ষেত্রে কাশফ একদম গ্রহণযোগ্য না। ভণ্ডনবী ইবনুস সাইয়েদ বা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানীও বিভিন্ন মিথ্যা কাশফের দাবী ও ঘটনা বর্ণনা করতো।

৪. যদি এমন সহজেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তাহলে জাহান্নামে আর কেউ যেত না। এগুলো বানিয়ে আসলে মুসলমানদের শুধু জিকিরনির্ভর সূফীবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।

► তাদের বহু জাল হাদিসের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করলামঃ

১. এক ঘণ্টা কিছু সময় চিন্তা জিকির করা, ষাট বছর ইবাদতের চেয়ে উত্তম। (ফাজায়েল জিকির, ৩০৪ পৃষ্ঠা)
২. এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা গেলে ৮০ হুকবা জাহান্নামে পুড়তে হবে। (ফাজায়েল নামাজ, ৮৯ পৃষ্ঠা)
৩. পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরলে, বিভিন্ন রকম পুরুস্কার, না পরলে বিভিন্ন রকম শাস্তি সংক্রান্ত হাদিসটি। (ফাজায়েল নামাজ, ৮০-৮১ পৃষ্ঠা)
৪. সহজে মুখস্থ করার দোআ সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদিসটি (ফাজায়েল কোরআন, ১০৫-১০৯ পৃষ্ঠা)

এছাড়া আরও অসংখ্য জাল হাদিস ও বিভিন্ন কেচ্ছা কাহিনী আছে যা উল্লেখ করতে গেলে বিশাল এক বই হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল ফাজায়েল আমল বইটিতে জাল ও দুর্বল হাদিসগুলোকে ঢেকে রাখার জন্য কোন হাদিসের পূর্ণ উৎস দেয়নি।

► তাবলীগদের কোরআন ও হাদিস বিরোধী মনগড়া গল্প 

ক। রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) এক পাগল সূফীকে চুম্বন করেন। (ফাযায়েলে দরূদ, হিকায়াত নং ৪২, পৃষ্ঠা ১০১)
খ। মুহাম্মাদ (সঃ) তাঁর অনুসারীদের খাওয়ানোর জন্য এক টুকরো রুটি নিয়ে একটি মেঘের উপর ভর করে আসমান থেকে অবতরণ করলেন। (ফাযায়েলে দরূদ, হিকায়াত নং ৪৮, পৃষ্ঠা ১১০)
গ। আল্লাহ্‌র রাসূল (সঃ), একজন মুমূর্ষ রোগীর চিকিৎসার জন্য তাঁর দাড়ি ছিঁড়ে দিলেন। (ফাযায়েলে দরূদ, হিকায়াত নং ৪৮, পৃষ্ঠা ১১০)
আল্লাহ্‌ সুব্‌হানাহু ওয়া তা’আলা যেন আমাদেরকে তাঁর রাসূল (সঃ) এর বিরুদ্ধে আরোপিত এ ধরণের জালিয়াতি, ধোঁকাবাজি, অপমান ও অনর্থক কথাবার্তা থেকে রক্ষা করেন এবং আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ)-এর হাউযে কাওসার থেকে পানি পান করার তৌফিক দান করেন।

●আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সঃ) বলেছেনঃ
‘’তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।‘’ (বুখারীঃ ১/১০৭[ই.ফা.বা])
●যুবায়ের আবু আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ
‘’যে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।‘’ (বুখারীঃ ১/১০৮[ই.ফা.বা])
●সালামা ইবনে আক্‌ওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ
‘’যে ব্যাক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।‘’ (বুখারীঃ ১/১১০[ই.ফা.বা])
 


ফাজায়েল সাদাকাত, ২য় খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
“আবু আলি রোদবারি (রঃ) বলেন, ঈদের দিন একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিল যে এখানে কি কোন পরিস্কার জায়গা যেখানে একজন ফকির মরিতে পারে? আমি ইহা বাজে কথা মনে করিয়া বলিলাম, ভিতরে এসে যেখানে এসে মর। সে ভিতরে আসিয়া ওযু করিয়া দুই রাকাত নামাজ পড়িল ও মারা গেল। আমি তাহার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করার পরে দেখিবার জন্য কাফন হটাইয়া দেখিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিল। আমি তাকে বলিলাম, মৃত্যুর পরেও জীবন? সে বলিল আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই জীবিত থাকেন। আমি তোমায় কাল কিয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে সাহায্য করিব”।

এখানে লক্ষণীয়-

১. ফকির আগে থেকেই তার মৃত্যুর খবর জেনে সে তার মৃত্যুর জায়গা নিজে নিজেই ঠিক করল।
২. সে মারা যাওয়ার পরেও একজন জীবিত মানুষ তাকে তাকে কিছু জিজ্ঞাস করল ও সে শুনল।
৩. কথা শুনার পর সে তার উত্তরও দিল।

এখন দেখা যাক কুরআন কি বলে।

১. আল্লাহ বলেন,
“... কেউ জানেনা আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানেনা কোন স্থানে সে মৃত্যুবরন করবে।” (সূরা লুকমানঃ ৩৪)
এই আয়াতের ব্যখায় নবী (সঃ) বলেন, “এগুলো গায়িবের কথা এবং এগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা।” (সহিহ বুখারি)

কুরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা সে কোথায় মারা যাবে। আর তাবলীগরা শিক্ষা দেয় ফকির বুজুর্গরা জানতে পারে তারা কোথায় মারা যাবে !!!

২. আল্লাহ বলেন,
“মৃতকে তো তুমি (নবী) কথা শুনাতে পারবে না”। (সূরা নামলঃ ৮৪)

তাহলে কিভাবে ঐ ব্যক্তি মৃত ফকিরকে প্রশ্ন করল এবং সে শুনল?

৩. আল্লাহ বলেছেন, “জীবিত ও মৃত কখনো সমান না”। (সুরা আল ফাতিরঃ ২২)
অর্থাৎ, কিন্তু গল্পে জীবিত ও মৃত- উভয়েই কথা বলছে অর্থাৎ উভয়েই সমান।

হাদিসে আছে (প্রথম অংশ দেওয়া হল), “একদিন রাসুল (সঃ) ও একজন ইহুদী বসে ছিলেন। এমন সময় একটি জানাজা অতিক্রম করতে থাকলে সে জিজ্ঞাসা করে, “হে মুহম্মদ, এই লাশ কি কথা বলতে পারে?” রাসুল (সঃ) জবাব দেন, “এই বিষয়ে আল্লাহ অধিক অবগত।.।"
(আবু দাউদঃ ৩৬০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত)

শুধু একটি ঘটনা না, আরও অসংখ্য (যেমন ফাজায়েল সাদাকাত, ২য় খণ্ডের পৃষ্ঠা ২৭০তে উল্লেখ্য দুটি ঘটনা, ৩২২, ৩৫৪ ইত্যাদি পৃষ্ঠাতে) এমন আজগুবি অনেক কিচ্ছা রয়েছে তাবলীগি ভাইদের একমাত্র পঠিত বইগুলোতে।

এখন দেখতে পাচ্ছি যে তাবলীগ ও তাদের আমলের বই, এক কথা বলছে, আর কোরআন হাদিস আর এক কথা বলছে। যেহেতু দুটো বিপরীত কথা, তাহলে এখানে যেকেউ একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। যেহেতু, কোরআন ও রাসুল (সঃ) কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা, সেহেতু যে গল্পটি বলেছে সে অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আর যে বইয়ে মিথ্যাবাদীদের দ্বারা তৈরি আজগুবি গল্প, কিচ্ছা কাহিনী দিয়ে ভরা সে বই অনুযায়ী আমল করতেই কি রাসুল (সঃ) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন? বরং রাসুল বলেছেন,

“নেতা, উপনেতা বা দাম্ভিক ধোঁকাবাজ লোক ছাড়া আর কেউ কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করেনা”। (আবু দাউদঃ ৩৬২৪)

► একটু জানুন ও ভাবুনঃ

১. ইহুদী নাসারারা মুসলমানদের একটা জিনিসই ভয় পায়, তা হল জিহাদ। তাবলীগরা এমন ধরনের জিনিস প্রচার করে মুসলমানদের কে মুল ইসলাম ও জিহাদ থেকে সরে নিয়ে এসে শুধু জিকিরনির্ভর সূফীবাদের দিকে নিয়ে যায়। আপনি কি জানেন, ইসরাইলেও তাবলীগরা বাধাহীন ভাবে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করে, যেখানে অন্যান্য মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ !!!

২. অন্যান্য সব ভাষায় ফাজায়েল আমল বইয়ের অনুবাদ থাকলেও আরবি ভাষায় এর কোন অনুবাদ নেই। কারন আরবরা দুর্বল, জাল হাদিস ও কিচ্ছা কাহিনীতে বিশ্বাস করেনা। তাই আরব তাবলীগদের বিশ্বস্ত হাদিসগ্রন্থ “রিয়াদুস সালেহিন” পড়ানো হয়।

৩. পাকিস্তান তৈরি হওয়ার সময়, ১৯৫০ সালে যখন সব ইসলামী দল “ইসলামী সংবিধান” প্রণয়নের জন্য আন্দোলন করছিল, তখন এই তাবলীগ নামক ইসলামী দল নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করেছিল, এই জন্য যে এগুলো নাকি ফেতনা, ফ্যাসাদ !!!

৪. ইহুদী খ্রিষ্টানদের তৈরি, নিজেকে নবী হিসেবে দাবীকারী ও নতুন ইসলাম প্রচলনকারী গোলাম আহমেদের তৈরি কাদিয়ানীদের যখন অমুসলিম ঘোষণা ও বিতাড়িত করার জন্য রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সকল ইসলামী দল মতভেদ ভুলে একসাথে ১৯৭৪ সালে “খতমে নবী” আন্দোলন ও প্রতিবাদ করছিল, তখন একমাত্র এই তাবলীগ জামায়াতই কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আন্দোলনে যেতে অস্বীকার করে নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করেছিল। যুক্তি তাদের যে প্রকৃত জিহাদ হল নিজের নফসের বিরুদ্ধে। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য যুদ্ধ বা আন্দোলন করা জিহাদ না, এগুলো ফেতনা, ফ্যাসাদ। অথচ আল্লাহ বলেছেন,
"তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন একমাত্র আল্লাহ‌র জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়"। (সূরা আনফালঃ ৩৯)

৫. সত্য-মিথ্যা যেখানে স্পষ্ট, সেখানে নিরপক্ষ ভুমিকা পালন করা মানেই মিথ্যাকে সমর্থন করা। কাদিয়ানীদের ক্ষেত্রে তাবলীগদের সেখানে নিরপক্ষ ভুমিকা পালন করা মানে এই নয় যে মিথ্যা কাদিয়ানীদেরকেই সমর্থন করা? আপনি কি জানেন কাদিয়ানীরাও যুদ্ধ, আন্দোলনের মাধ্যমে জিহাদ করে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাকে ফেতনা, ফ্যাসাদ হিসেবে প্রচার করে?

৫. ভারতে যখন হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হল, তখন হাজার হাজার মুসলমানদের হিন্দুরা হত্যা করেছিল। এর প্রতিবাদ সব ইসলামী দলই করলে, একমাত্র তাবলীগ ছিল চুপ, ফেতনা ফ্যাসাদের ভয়ে। এর পুরষ্কার সরূপ তারা ইন্দ্রা গান্ধীর সময়েও তাদের “তাবলীগি” দাওয়াত চালানোর অনুমতি পায়, যখন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অন্য সকল ইসলামী দলকে নিষিদ্ধ ও বাধা দেওয়া হয়।

৬. এমন কোন বিধর্মী দেশ নেই, যেখানে তাবলীগরা তাদের দাওয়াতি কাজ করতে পারেনা। আপনি অনেক আরবের তাবলীগ দেখতে পাবেন, কিন্তু সউদি আরবে তাবলীগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করেছে তাদের ত্রুটিযুক্ত একমুখী নির্দিষ্ট ভিন্ন আকিদার কারনে।

৭. রাসুল (সঃ) ও তার সাহাবারা যখন ইসলামের দাওয়াতে বের হতেন, তখন তারা ইহুদীদের হাতে অত্যাচারিত, বাধাপ্রাপ্ত হতেন। এর কারন ইসলামেরর মুল আদর্শ, বিশ্বাসের সাথে তাদের আদর্শ এক হতনা বলে। অথচ, আজ পর্যন্ত দেখেছেন আমাদের এই তাবলীগ ভাইরা কোথাও গিয়ে অত্যাচারিত, জেল, জরিমানা হয়েছে? এমনকি যেকোনো বিধর্মী দেশে গেলেও তাদের আরও Welcome জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে তারা বলে, এটা নাকি তাদের উপর আল্লাহর রহমত !!! অত্যাচারিত, বাধাপ্রাপ্ত না হওয়াকেই যদি তারা আল্লাহর রহমত বলে, তাহলে কি রাসুল (সঃ) এর উপর আল্লাহর রহমত ছিলনা? (নাউজুবিল্লাহ)

৮. ইসলাম মুসলমানদের দলবদ্ধ হয়ে থাকাকে ফরজ করে দিয়েছে। তারাও দলবদ্ধ। আল্লাহ বলেছেন,
"আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা (মানুষকে) সৎকর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই হলো সফলকাম"। (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৪)

কই তারা কখনো অন্যায় কাজের নিষেধ বা প্রতিবাদ করেছে? কখনোই না। যেকোনো অন্যায় ও অ-ইসলামিক কাজের প্রতিবাদ করা জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন,
“তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেনইনি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল”। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৪২) 


এটা স্পষ্ট যে তারা যেহেতু কোরআনের কিছু অংশ মানছে, আবার কিছু অংশ মানছে না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যখন বিভিন্ন সরকার অ-ইসলামিক আইন ও কাজ করত, তারা কখনো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তো দূরে থাক, এসব নিয়েও আলোচনা করতো না... কারন একটাই- ফেতনা, ফ্যাসাদের ভয়। যেই আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম ইসলামের দাওয়াত তারা দেয়, সেই আল্লাহর নাম ও তার প্রতি বিশ্বাস সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হল, আর ফেতনা ফ্যাসাদের ভয়ে তারা চুপ !!!
বাংলাদেশের বর্ডারে হিন্দু বি.এস.এফ প্রতিনিয়ত গুলি করে বাংলাদেশিদের পাখির মত মারছে। তারা সরকারকে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে না বলে, চুপ। ইসলাম কি অন্যায় দেখে চুপ থাকতে বলেছে? অবশ্যই না। যদি না বলে থাকে, থাকে তাহলে তাবলীগরা কোন ইসলাম প্রচার করছে?

৯. ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার কথা বললে, তারা বলে তাদের এখনো পর্যাপ্ত জনবল হয়নি। তাই দাওয়াতি কাজ দিয়ে আগে বেশি সংখ্যক মানুষকে ইসলামের দিকে নিয়ে আসতে হবে। অথচ তারা গর্বকরে বলে, পবিত্র হজ্জের পরেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলিম একত্রিত হয় তাদের বিশ্ব এজতেমায়। সত্যি, টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমায় তাদের যে সংখ্যক লোক সমাবেত হয়, তারা সবাই যদি একযোগে ইসলামী রাষ্ট্রের দাবীতে বা যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে ঢাকার দিকে মার্চ শুরু করে, কোন সরকারের ক্ষমতা নাই এত সংখ্যক মানুষকে আটকানোর।

► এবার চিন্তা করে দেখুন, তাবলীগরা কি প্রকৃত ইসলাম মানছে? বরং প্রকৃত ইসলামকে তারা ধীরে ধীরে ধংস করছে । অনেকে বলতে পারেন, তারা একটু হলেও তো ভাল কাজ করছে, মানুষকে নামাজের দিকে ডাকছে। তাদের জন্য উত্তর হল- ওযু করা তো পবিত্র কাজ। কিন্তু আপনি যদি পানি না দিয়ে মুত্র দিয়ে ওযু করেন, তাহলে কি সেই ওযু হবে? মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকতে হবে, কিন্তু সেটা করতে হবে রাসুল (সঃ) যে পদ্ধতিতে করে গেছেন সেভাবে; কিন্তু তাবলীগের মত “চিল্লা” নামক বেদায়াত পদ্ধতিতে না।

আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, “ হে মুমিনগন, তোমরা পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সূরা বাকারাঃ ২০৮)
পূর্ণরূপে মানে এই না যে শুধু সুন্নাতি পোশাক ও লেবাস পরে দোআ, জিকির, নামাজ নিয়ে পরে থাকা। পরিপূর্ণরূপে মানে এটা যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোরআন সব বিধান ও রাসুলের সুন্নাহ মান্য করে একমাত্র কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করা। 
http://www.priyoboi.com/2010/01/blog-post_22.html